বাংলা হোক জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষা #MakeBengaliUN7thOfficialLanguge
বাংলা পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে দিতে হয়েছিল বুকের তাজা রক্ত আর কিছু তাজা প্রাণ। সেই মহান শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত যে ভাষা, সে ভাষার পরিপূর্ণ মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আমরা কতটুকু সোচ্চার? ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু বাংলা কি ভাষা হিসেবে তার প্রাপ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে?
বাংলাকে জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমেই আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা এবং যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করতে পারি। ভাষা শহীদদের ঋণ কোনদিনই শোধ হওয়ার নয়, কিন্তু আমাদের কি উচিৎ নয় তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে বাংলাকে জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সোচ্চার হওয়া?
জাতিসংঘের বৈঠকে কথপোকথনের জন্যে এবং সকল আনুষ্ঠানিক নথিপত্র লেখার ক্ষেত্রে কেবল ৬ টি ভাষাই ব্যবহৃত হয়। এই ভাষাগুলো হলো: আধুনিক স্ট্যান্ডার্ড আরবী, অক্সফোর্ড বানানে ব্রিটিশ ইংরেজী, ফরাসী, ম্যান্ডারিন (সরলীকৃত চীনা বর্ণমালা), রুশ এবং স্প্যানিশ ভাষা। ইংরেজী, ফরাসী, রুশ এবং ম্যান্ডারিন ১৯৪৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে ইংরেজী ও ফরাসী ভাষাকে ঐ বছরেরই ২৪শে জুন থেকে ব্যবহার করা শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের ২২শে জানুয়ারী নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে স্থান পায় রুশ এবং স্প্যানিশ ভাষা। ১৯৭৪ সাল থেকে চীনা ম্যান্ডারিন ভাষাও নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়। আরবী ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের ষষ্ঠ দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিভাবে একটি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হওয়ার মর্যাদা অর্জন করে? অল্প কথায় বললে বলা যায় যে, মুলত যে ভাষার গুরত্ব এবং দাপ্তরিক প্রয়োগ যত বেশি, সেই ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হওয়ার জন্যে তত উপযোগী। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্যে শুধু কোন ভাষায় পৃথিবীর মোট কত মানুষ কথা বলে তা বিবেচনা করা হয় না বরং সে ভাষাটির দাপ্তরিক প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক গুরত্ব কতটুকূ তা বিবেচনা করা হয়। ঠিক এই কারনেই জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভাষাগত অবস্থানে বিশ্বে ৪র্থ স্থানে থাকা হিন্দি, ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা পর্তুগীজ এবং ৭ম স্থানে থাকা বাংলা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্থান পায় নি কিন্তু স্থান পেয়েছে ৮ম স্থানে থাকা রুশ কারণ ভাষাটি ৩৮টি দেশের দাপ্তরিক ভাষা।
বর্তমান বিশ্বে বাংলা ভাষার অবস্থান এবং প্রেক্ষাপট শুধুমাত্র জনসংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়। বাংলার দাপ্তরিক ব্যবহার অনেক দেশে বিস্তৃত না হলেও এর ঐতিহাসিক এবং দাপ্তরিক গুরত্ব অনেক। বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রস্তুতির পাশাপাশি ভাষাটিকে নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করা উচিৎ। ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রতিযোগিতায় বাংলা ভাষা হিন্দি থেকে অনেক এগিয়ে আছে কারণ ভারতের ২২টি ভাষাই দাপ্তরিক ও হিন্দি কেবলমাত্র তাদেরই একটি, রাষ্ট্রভাষা নয়; অপরদিকে বাংলা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা এবং বিশ্বের মোট ৩টি দেশের দাপ্তরিক ভাষা। কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় পর্তুগীজ ও মালয় ভাষা এগিয়ে থাকলেও এই দুটি ভাষার বাংলার মত কোন মহিমান্বিত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নেই।
আরবী জাতিসংঘের সর্বশেষ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দাপ্তরিক ভাষা কারণ বিশ্বের মোট ২৪টি দেশে আরবী দাপ্তরিক ভাষা এবং এর মধ্যে ২২টি দেশ জাতিসংঘের সব নথিপত্র আরবীতে অনুবাদের সম্পূর্ণ অর্থ বহন করার নিশ্চয়তা দিয়েছে। এমতবস্থায়, বাংলাকে জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আমাদের প্রয়োজন মিলিত সরকারি এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা। যদি অনুবাদের অর্থ সরবারহ সরকারি উদ্যোগে করা যায় তাহলে আমাদের দায়িত্ব হবে জনসচেতনা বৃদ্ধি করা এবং সর্বোচ্চ সমর্থন তৈরি করা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনবার জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তাঁর এ দাবির সমর্থনে বাংলাদেশের সংসদে একটি রেজুলেশন পাশ করা হয় ২০০৯ সালে এবং এর অনুসরনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও সংসদে একটি সমার্থক রেজুলেশন পাশ করা হয়। সরকারী এ উদ্যোগ ছাড়াও, বেসরকারী এবং ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এই জনপ্রিয় দাবিটির সমর্থনে। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ এই দাবির প্রতি গুরুত্ব দেখিয়ে কোন পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করেনি। তাই, আমাদের কর্তব্য হবে গণজাগরণ তৈরি করে সারা বিশ্বের সমর্থন অর্জন করে জাতিসিংঘকে রাজি করানো।
বিশ্বে গণজাগরণ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন আদায়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসের ইতিহাস এবং বাংলার গুরত্ব পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্যে হলেও বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া জরুরী। এছাড়াও --
১। বাংলা ভাষা বাংলাদেশের জাতীয় ও দাপ্তরিক ভাষা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা।
২। ভারতীয় সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম একটি ভাষা বাংলা।
৩। ২০০২ সালে সিয়েরা লিয়নের একটি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
৪। সারাবিশ্বে ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটিরও বেশী মানুষ বাংলায় কথা বলে। বাঙ্গালীরা সারা বিশ্বের প্রতিটা দেশেই ছড়িয়ে আছে।
৬। জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলা পৃথিবীর ৭ম ভাষা।
৭। বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত এবং ভারতের জাতীয় স্তোত বাংলা ভাষাতেই রচিত।
৮। বাংলা ভাষা সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক পরিচয় পায় যখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে তার বাংলা কাব্যগ্রন্থ “গীতাঞ্জলী“র জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।
৯। বাংলাই পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার জন্য ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করা হয়েছে এবং সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউলসহ আরও অনেক ভাষা সৈনিক অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন।
১০। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ৩০তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেন।
১১। ১৯৯২ সালে সত্যজিৎ রায় আজীবন সন্মাননা স্বরূপ অস্কার পুরস্কার লাভ করেন তাঁর নির্মিত বাংলা চলচিত্রর জন্য।
১২। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো, বাঙ্গালীর “মাতৃভাষা দিবস”২১শে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা” দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এখন সময় বাংলাকে স্বীকৃত একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। যেভাবে ১৯৫২ তে সালাম, রফিক, জাব্বার, বরকত, শফিউলরা জীবন দিয়ে মাতৃভাষার মান অক্ষুণ্ণ রেখেছে, ঠিক সেভাবে না পারলেও, আমরা একটি জোরালো দাবি উত্থাপন করে বাংলাকে জাতিসংঘের ৭ম ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আমাদের এই প্রাণের ভাষার মর্যাদাকে বিশ্ব পরিসরে উন্নত করতে অবশ্যই পারি।
যদিও জাতিসংঘের সপ্তম ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি সহজ কাজ নয়, তবুও বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি আদায়ের কাজটি শুরু করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবিটি উত্থাপন করে রেজুলেশন আনতে হবে। উত্থাপিত এই দাবিটির প্রতি জাতিসংঘের অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন থাকলেই বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রক্রিয়াটি শুরু হবে। এই সমর্থন অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের সচেষ্ট ভুমিকা থাকা প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আমরা আমাদের এই দাবিটি পৌঁছে দিতে পারি জাতিসংঘের কাছে। তবে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সব নথিপত্র বাংলায় অনুবাদ করার ব্যয়ভার নেয়ার জন্য সম্মত হতে হবে যেমনভাবে ২২টি আরব স্বাধীন দেশ আরবীকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার সময় অনুবাদের সব অর্থ দেয়ার চুক্তি করেছিলো। এখন বাংলাদেশকে দুটি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে প্রথমত: অনুবাদের এই বিশাল পরিমাণ অর্থের জোগান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া ও দ্বিতীয়ত: উত্থাপিত দাবির প্রতি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আদায় করা। বাংলাকে জাতিসংঘের ৭ম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বাংলা এবং বাংলাদেশের গ্রহনযোগ্যতা সারাবিশ্বে অনেক গুনে বেড়ে যাবে। অনুবাদের এই অর্থ জোগান দেয়াটা একটি ভাল বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করবে। সরকার যাতে এই প্রক্রিয়াটি শুরু করে সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত ও বেসরকারীভাবে জনমত গড়ে তুলতে তবে।
এবারে আসা যাক উত্থাপিত দাবির প্রতি সমর্থন আদায়ের প্রসঙ্গে। জাতিসংঘের ভাষা হিসেবে স্থান পেয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে চারটি ভাষা এবং ইংরেজী ভাষা রয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেনের জন্য। আর আফ্রিকার অনেক দেশেই দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আরবী ব্যবহৃত হয়। এখন এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যদি বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার দাবি উত্থাপন করে তবে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে এশিয়ার ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন তীব্র করতে হবে। ২২টি আরব দেশের সমর্থন বাংলাদেশের প্রতি আনাটা কঠিন হবে না কারণ আরবী ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্থান পেয়েছে।
এখন শুধু দেখার বিষয় যে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ কতটা জোরালো হয় এবং জাতিসংঘের বাকি সদস্য রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশকে সমর্থন করে কিনা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলার প্রচলন আছে। তাই আমরা যদি এশিয়া থেকে ভারতকেও আমাদের এই দাবি আদায়ে সাথে পাই তবে এই প্রস্তাবটি আরও দৃঢ় হবে। তাছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশী যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠণগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে তাদেরকেও এই দাবি আদায়ে বিদেশী দূতাবাসের মাধ্যমে যুক্ত করলে প্রক্রিয়াটি আরও শক্তিশালী, সহজ ও দ্রুত হবে বলে আশা করা যায়।
#MakeBengaliUN7thOfficialLanguge #IMLD #InternationalMotherLanguageDay
Grammar
Read More
- Tea Stall - Paragraph for HSC and SSC
- School Magazine - Paragraph for HSC and SSC
- Load Shedding - Paragraph for HSC and SSC
- National Flag - Paragraph for HSC & SSC
- Mobile Phone - Paragraph for HSC & SSC
- Digital Bangladesh - Paragraph for HSC and SSC
- Internet - Paragraph for HSC & SSC
- Diaspora - Paragraph for SSC and HSC
- Dengue Fever - Paragraph for SSC and HSC
- Adolescence - Paragraph for SSC & HSC